Grating

Grating

Saturday, April 22, 2017

শেষ কথা


বিকেল শেষ। সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশ ভরা মেঘ।
হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। প্রচন্ড মাথা ধরেছে। খুব চেষ্টা করলাম মাথাধরাকে পাত্তা না দিতে। পাত্তা না দেওয়ার কারণে মাথাধরা আরও বাড়ল। মাথাধরা কমানোর জন্য আমি একটা ওষুধের দোকানে ঢুকে পড়লাম। চারটা নাপা কিনব। দু'টা খেয়ে দু'টা ভবিষ্যতের জন্য পকেটে রেখে দিব। 

দীর্ঘদিনের অভ্যাস যে-কোনো দোকানে ঢোকার আগে দোকানের নাম পড়ি। মাঝে মাঝে সুন্দর সুন্দর নাম চোখে পড়ে। তখন বেশ মজা লাগে। একবার নিকুঞ্জ'তে একটা স্টেশনারি দোকানের নাম পেয়েছিলাম- 'ফেসবুক'। আরেকবার মিরপুরে একটা হোটেলের নাম পেয়েছিলাম- 'মায়ের আদর'। 

যাই হোক, ফার্মেসিতে ঢোকার আগে চট করে নামটা দেখে নিলাম। নামটা বেশ অদ্ভুত 'সরস্বতী' ড্রাগ হাউজ। সাইন বোর্ডে হাস্যমূখী সরস্বতী'কে হাসের উপর বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে আবার তানপুরা। বিদ্যার দেবী মনে হয় গান-বাজনাতেও পারদর্শী। 

চারটা নাপা'র দাম আট টাকা। মাথাধরা নামক অতি যন্ত্রনাদায়ক রোগের জন্য খুব সস্তা চিকিৎসা। দোকানদারকে পানি দিতে বললাম। সে পরিস্কার গ্লাসে পানি এনে দিল। সাথে সাথে দু'টা ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম। ওষুধের দাম দিতে গিয়ে আমি প্রচন্ড অবাক। মানিব্যাগ নেই। পকেটমার হয়নি জানি। সকালে ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। ওষুধ দু'টা গিলে না ফেললে ফেরত দেয়া যেত। খুব লজ্জার মধ্যে পড়লাম। কী করবো বুঝতে পারছি না। দোকানদারটা যেন কেমন-কেমন করে তাকাচ্ছে। 

একটি রুপসী মেয়ে দূর থেকে ব্যাপারটি লক্ষ করছিলেন। মেয়েটি একটুও সাজেনি, শুধু চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। তাতেই তাকে অসাধারন সুন্দর লাগছে। মেয়েটি এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল, আপনি একটু আমার ঘরে আসবেন? আটটা টাকার জন্য কঠিন কিছু কথা শুনতে হবে কিনা বুঝতে পারছি না। 

আমি মেয়েটির ঘরে ঢুকলাম এবং খুব বিনীতভাবে বললাম, সিস্টার এই মুহূর্তে ট্যাবলেটের দাম দিতে পারছি না। কাল ভোরে এসে দিয়ে যাব। 

সিস্টার সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল, আমি একজন ডাক্তার। সামান্য চারটে ওষুধের দাম দিতে না পারায় আপনি এ-রকম করছেন? ভাই, আপনি আরও দুই পাতা ট্যাবলেট নিয়ে যান। এর দাম আপনাকে দিতে হবে না। আর শুনুন আপনি আমার সামনের চেয়ারটায় বসুন। চা দিতে বলছি, গরম চা খান, মাথা ধরাটা কমবে। 

বাচ্চা একটা মেয়ে, বলে কিনা সে ডাক্তার! আমি ডাক্তারের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! দিনকাল পালটে গেছে, প্রিয়জনদের কাছ থেকেই ভালো ব্যবহার পাওয়া যায় না, আর এই মেয়ে নিতান্ত'ই অপরিচিত একজন। আমি বললাম, আপনার নামটা জানতে পারি? 
ডাক্তার মেয়েটি বলল, অবশ্যই জানতে পারেন। আমার এমনই নাম যে একবার শুনলে জীবনেও ভুলবেন না। আমার নাম- 'বালি'। 
আমি অবাক হয়ে বললাম, বালি?
ডাক্তার মেয়েটি বলল, হ্যাঁ বালি। দুষ্ট করছি না। আসলেই আমার নাম বালি। আমার জন্ম হয়েছিল- ইন্দোনেশিয়ায়। আমার ভালো নাম অহনা। 

আমি অহনা'র দিকে খুব মন দিয়ে তাকালাম। কি সুন্দর গায়ের রঙ, চোখ, মুখ! বয়স ২২/২৩ এর বেশি হবে না। মাথা ভরতি চুল ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। দেখতে ভালো লাগছে। 
বালি- বলল, আপনার মাথাধরার অবস্থা কী?
আমি বললাম, একটু কমেছে। 
অহনা বলল, একমিনিটের জন্য চোখটা বন্ধ করবেন?
আমি বললাম, কেন?
আপনার কপালে আর চোখে একটা মলম লাগিয়ে দিব। চীন দেশের মলম। নাম ড্রাগন মলম। লাগাবার তিন মিনিটের মধ্যে মাথা ধরা চলে যাবে। 
আমি চোখ বন্ধ করলাম। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মেয়েটি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে চোখের পাতায় আর কপালে মলম লাগিয়ে দিল। খুব আরামদায়ক ম্যাসেজ। মুহূর্তের মধ্যেই আমার তন্দ্রাভাব এলো। এবং ম্যাজিকের মতো মাথা ব্যাথা ভেনিশ হয়ে গেল। 
চা এলো। চায়ের সাথে নান রুটি আর গ্রীল চিকেন। যেহেতু আমি খুব ছোট মাপের মানুষ, এই রকম আদর আপ্যায়নে অভ্যস্ত নই। তাই কিছুটা অস্বস্থি লাগে। 
আমি খেতে খেতে ডাক্তার অহনার ঘর খুটিয়ে- খুঁটিয়ে দেখছি। সুন্দর করে সাজানো ঘর। পায়ের নীচে নরম কার্পেট। দেয়ালে একটা বাঁধাই করা ছবি। ছবিটা নিশ্চয়ই অহনার ছোটবেলার। ফ্রক পরা অহনা দুইহাত দিয়ে একটা বারবি পুতুল বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। টেবিলের উপর দু'টা বই। একটার নাম 'হিউম্যানিজন' আরেকটার নাম- তিথিডোর। দু'টা বই'ই আমার পড়া।

No comments:

Post a Comment