Grating

Grating

Monday, May 22, 2017

আসুন মাসিক নিয়ে কথা বলি।

মাসিক শব্দটার সাথে আমরা ছোট বড় কম বেশী সব ছেলে মেয়েই পরিচিত। তবে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা ছেলেরা একটু কটুভাব থাকলেও মেয়েরা এ নিয়ে কথা বলতে বা পরিবারের কিংবা কোন বন্ধু-বান্ধবির সাথে আলোচনা করতেও নারাজ। কারন এটা নাকি লজ্জার বিষয়, অভ্যন্তরীন বিষয়। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের দেশে এই নিয়ে কথা বলতে সংকোচ সবার মধ্যে।
আমরা ছেলেরা যারা মেয়েদের এই মাসিক নিয়ে কটুভাব থাকি তারা কি কখনো একবারও জানার চেষ্টাটুকুনও করেছি যে আপনার বোন, মা, বউ, মেয়ে কিংবা গার্লফ্রেন্ড যখন প্রতিমাসে এই মাসিকে প্রতিত হোন তখন তাদের কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয়? কতটুকু মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে হয়? কতটুকু একাকীত্বতায় থেকে যন্ত্রনায় ছটপট করতে হয়? ভাবেন নি। কারন আপনি আমি রাস্তায়, ক্লাসে, অফিসে কিংবা যেকোন জায়গায় একটা মেয়ের জামাতে একটু লালচে ভাব দেখলেই হাসাহাসি শুরু করে দেই। তাকে বিব্রত করার চেষ্টা করি। যা আমাদের হীনমানসিকতার পরিচয় বহন করে বৈ আর কিছুই না।
আঞ্চলিকতায় মাসিক হলেও একে ইংরেজীতে পিরিয়ড বলে, আরবিতে হায়েজ বলে, আর বৈজ্ঞানিক ভাবে রজঃস্রাব। রজঃস্রাব (ইংরেজি: Menstruation) হলো উচ্চতর প্রাইমেট বর্গের স্তন্যপায়ী স্তরী- একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রজননের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতি মাসে এটি হয়। প্রজননের উদ্দেশ্যে নারীর ডিম্বাশয়ে ডিম্বস্ফোটন হয় এবং তা ফ্যালোপিয়ন টিউব দিয়ে জরায়ুতে চলে আসে এবং ৩-৪ দিন অবস্থান করে। এ সময় যদি পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে নারীর জরায়ুতে শুক্রানু না-আসে এবং এই না-আসার কারণে যদি ডিম্ব নিষিক্ত না হয় তবে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং জরায়ুগাত্রের অভ্যন্তরতম সরস স্তর(এন্ডমেট্রিয়াম) ভেঙ্গে পড়ে। এই ভগ্ন ঝিল্লি, সঙ্গের শ্লেষ্মা ও এর রক্ত বাহ থেকে উৎপাদিত রক্তপাত সব মিশে তৈরী তরল এবং তার সংগে এর তঞ্চিত এবং অর্ধ-তঞ্চিত মিশ্রণ কয়েক দিন ধরে লাগাতার যোনিপথে নির্গত হয়। এই ক্ষরণই রজঃস্রাব বা রক্তস্রাব বা ঋতুস্রাব মাসিক।
সহজ করে বললে, ‘মুন ক্যালেন্ডার' বা চন্দ্রমাস অনুয়ায়ী, মেয়েদের জরায়ু যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্রতিমাসে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে, মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে৷
এসময় মেয়েদের অনেক রকমের সমস্যায় পড়তে হয়। মাসিক চলাকালিন মেয়েদের কোমড়, পিঠ, মেরুদন্ড সহ দুই পায়ে ব্যাথা করে। মাথা ঘুরে, বমি বমি ভাব হয়। খিঁচুনি সহ আরো নানাবিদ সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। এসময় গুলোতে সাধারনত নিজেদেরকে খুব অসহায় এবং একাকীত্বতা বোধ করে মানসিক সমস্যায় পতিত হয়ে পড়ে। মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথায় প্রায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে অনেক মেয়ে৷ তাদের ডাক্তার দেখানো হয় না৷ কেন তার ব্যাথাটা ব্যতিক্রম, এ নিয়ে পরিবারের কোনো মাথা ব্যথা নেই৷
মেয়েটি তখন কারো সাথে এই নিয়ে আলোচনাও করতে পারে না। মা বাবা, ভাই বোন কিংবা বান্ধবিদের সাথেও এব্যপারে কোন কথা শেয়ার করতে পারে না। আমাদের সমাজে এসব বলা ঠিক না। বেয়াদপ ভাবে। নির্লজ্জ হিসেবে মেয়েটিকে উল্টো অপবাদ দিতে থাকে। অথচ এই কঠিন সময়টাতেই মেয়েটিকে সাহস দেয়া উচিৎ। যত্ন করা, মানসিকভাবে তাকে সুস্হ রাখা, কি কি করলে তার ব্যাথা উপশম হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। একজন স্বামী একজন বয়ফ্রেন্ড তার। গার্লফ্রেন্ড এর এই সময়টাতে, একজন মা কিংবা বাবা তার মেয়ের এই সময়টাতে অন্যদিন থেকে একটু বেশী কেয়ার, দেখাবাল করা, খাওয়াটা ঠিকমত করানো, একটু বেশী ভালোবাসা দেয়া উচিৎ। কিন্তু এসব আমাদের সমাজে লজ্জার বিষয়। এমন সময় কেউ তাদের পাশে থাকতে চায় না।
সাধারন মাসিক হলে মেয়েরা সেনোরা প্যাড ব্যবহার করে অবশ্যক যাদের সামর্থ্য আছে কিনার। আর যাদের প্যাড কিনার সামর্থ্য নেই তারা পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করতে পারে। সুতি কাপড়টা অবশ্যই অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে এবং এক কাপড় পরিষ্কার করে দুবার ব্যবহারের পরও অবশ্যই সেটা ফেলে দিতে হবে নয়তো ইনফেকশান হবার সম্ভাবনা থাকে যার কারনে জরায়ু ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে।
এক ছেলেকে লেখা তার মায়ের চিঠির কয়েকটি কথা দিয়ে লেখাটা শেষ করি,
এক মা তার ছেলেকে একটা চিঠি লিখেছেন। যেখানে খু্ব সুন্দর করে বর্ণনা করেছিলেন মেয়েদের মাসিক হলে কতটা কষ্ট হয়, সেসময় তাদের বিশ্রাম দরকার, ঠিকমত খাওয়া দরকার, পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার৷ এমনকি স্কুলে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়লে ছেলেরা কোনো মেয়ের জামায় দাগ দেখলে তা নিয়ে যদি কটূক্তি করে, তবে সেটা যে ঠিক নয় সেই মা তার ছেলেকে জানিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন তার মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যেন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে, যেন সচেতনতার কথা বলে, বলে যে তাদের কষ্টটা সেও বোঝে কারণ তার মায়ের কষ্ট হয়৷
এই মায়ের মতো প্রতিটি পরিবারের বাবা-মা কিংবা স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকারা যদি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মাসিক নিয়ে আলোচনা করেন, তবে হয়ত এ বিষয়ে সচেতনতা আরো বাড়বে৷ মাসিক যে একটা নারীকে অন্য একটা প্রাণের জন্ম দেয়ার জন্য তৈরি করে, এটা যে তার জন্য কোনো অভিশাপ নয় বা সমাজের নিষিদ্ধ কোনো আলোচনার বিষয় নয়, মেয়েরা যেন তা বুঝতে পারে এবং ছেলেদের সঙ্গে এ বিষয়ে এ জন্য আলোচনা করা, যাতে ছেলেরা এসময় মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে৷ তাই পরিবার আর স্কুলই হোক এক্ষেত্রে একটি ছেলে-মেয়ের সচেতনতার সূতিকাগার৷

No comments:

Post a Comment