চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসঘটিত রোগ যা এডিস মশা দ্বারা ছড়ায়। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় ৬০টি দেশে এই রোগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও এই রোগটির প্রকোপ দেখা দিয়েছে হঠাত করেই। এই রোগ আপনাকে মেরে ফেলবে না ডেঙ্গু জ্বরের মত করে। রোগের বাহক সেম টাইপের মশা (এডিস) হলেও এটি ডেঙ্গুর মত প্রাণঘাতী নয়। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচন্ড শারীরিক কষ্টের মধ্যে দিতে যান যা তাকে অনেকটাই অক্ষম করে দিতে পারে কিছুদিনের জন্য। চিকুনগুনিয়ার জন্য সঠিক ঔষুধ এখনো বাজারে আসেনি। সুতরাং আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন দেখে নিই কিভাবে সহজ উপায়ে এই রোগ চিনতে ও ঠেকাতে পারি হওয়ার আগেই-
লক্ষনঃ
১। চিকুনগুনিয়া বহনকারী মশা দংশনের ৩-৭ দিনের মধ্যে লক্ষন দেখা দেবে
২। প্রধান লক্ষন হলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা (১০২-১০৪ ডিগ্রি ফা.)
৩। পুরো শরীর প্রচন্ড ব্যথা বিশেষ করে হাড়ের সংযুক্তি স্থল গুলোতে
৪। এছাড়াও পেশীতেও ব্যথা হতে পারে, চুলকানি, মাথাব্যথা কিংবা র্যাশ দেখা দিতে পারে
৫। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নবজাতক আর বৃদ্ধরা((≥৬৫ বছর) প্রধান শিকার
৬। জ্বর চলে যাবে ৭-১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ব্যথা থাকতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত এমনকি বছরও হতে পারে
প্রতিরোধঃ
১। যেহেতু এটি মশাবাহিত রোগ, সবার আগে মশার জন্মাতে পারে এমন জায়গা খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে হবেঃ টবের পানি, গর্তে জমে থাকা পানি, ছাদে-বারান্দায় কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না
২। এডিস মশা যেহেতু দিনেও কামড়ায় সেহেতু দিনে ঘুমালে মশারি টাঙ্গিয়ে নিন
৩। অ্যারোসল স্প্রে, কয়েল, ইলেক্ট্রিক ব্যাট ব্যবহার করুন মশা মারতে
৪। শরীরের খোলা অংশে ‘মসকুইটো রেপেলেন্ট’ (মশা না কামড়ানোর ক্রিম) লাগিয়ে নিন ঘুমানোর আগে
প্রতিকারঃ
১। আগেই বলা হয়েছে যে চিকুনগুনিয়ার জন্য আলাদা ভাবে কোন ঔষুধ তৈরি হয়নি
২। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ন বেডরেস্ট দিতে হবে
৩। প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহন করতে হবে ডিহাইড্রেশন ঠেকানোর জন্য
৪। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দেয়া যেতে পারে। তবে সেটা নিজে করার চাইতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেবেন অবশ্যই
৫। ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন দেয়া যাবে না(এর ফলে রক্তক্ষরন হতে পারে যদি ভুলবশত ডেঙ্গু হয়ে থাকে)
৬। ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে থাকলে প্রথম সপ্তাহ অবশ্যই মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকতে হবে কারন আপনার রক্ত নিয়ে আরেকজনকে দংশন করলে দংশিত ব্যক্তিও আক্রান্ত হবেন
৭। চুলকানির জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন দেয়া যেতে পারে
৮। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে
যে কোন রোগ এড়ানোর প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো প্রতিরোধ গড়ে তোলা আক্রান্ত হওয়ার আগেই। তাতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায় অনেকটাই। চিকুনগুনিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। আর যে কোন রোগ সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো স্বয়ং রোগে আক্রান্ত হওয়ার চাইতেও ভয়াবহ কাজ। নিজে সঠিক না জেনে অন্যকে জানাবেন না। এতে আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই তৈরি হবে না।
সাবধানে থাকুন।
তথ্য সংগৃহিতঃ
১। লিঙ্ক
২। লিঙ্ক
৩। লিঙ্ক
No comments:
Post a Comment